শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : গতবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ শবনম জাহানকে চাকরিচ্যুত না করে পদাবনতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শবনম জাহানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকের পদ থেকে নামিয়ে সহকারী অধ্যাপক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে তিনি বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ অনিয়ম করে ছাড় পায় না, গতকাল সিন্ডিকেট সেটাই প্রমাণ করল। পদাবনতি দিয়ে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।”
দীর্ঘ ২৮ বছর পর গতবছর ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন হয়। সেদিন সকালে ভোট শুরুর আগেই কুয়েত-মৈত্রী হলের একটি কক্ষ থেকে বস্তাভর্তি ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়, যেগুলোতে ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে সিল মারা ছিল।
ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তাৎক্ষণিকভাবে শবনম জাহানকে ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ।
ওই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছর ২৮ মার্চ শবনম জাহানকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট৷ পরে ওই ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়।
এক বছরের বেশি সময় পর ওই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত না করে পদাবনতি দেওয়া হল।
ওই নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা হলের আরও দুজন আবাসিক শিক্ষককেও অনিয়মের জন্য দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদন। তবে তাদের কোনো শাস্তি না দিয়ে ‘সতর্ক’ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।
শবনম জাহানকে কেন চাকরিচ্যুত করা হয়নি জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “প্রথম যে কমিটি ছিল, সেটা ছিল ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। ওই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এখন তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও সুপারিশের ভিত্তিতে তার পদাবনতি করে শাস্তি দিয়েছে সিন্ডিকেট।”
তিনি বলছেন, তদন্ত কমিটি শুধু বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল সংসদ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে, কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ( ডাকসু) নির্বাচনে ‘কোনো জালিয়াতি হয়নি’।
ওই সুপারিশের কারণ জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান খন্দকার বজলুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলে তা ‘একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে’ সমাধান করতে হয়।
“প্রথম কমিটি তাকে (শবনম জাহান) সাসপেন্ড করেছে, এর মানে এটা নয় যে তিনি দোষী। প্রথম কমিটি ছিল ফ্যাক্ট চেকিং কমিটি। তাদের সিদ্ধান্তটা ছিল সাময়িক বরখাস্তের। আমরা তদন্ত কমিটি ঘটনা পর্যালোচনা করে তাকে ডেমোট করতে রেকমেন্ড করেছি। সিন্ডিকেট সেটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
অধ্যাপক বজলুল হক বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউকে চাকরিচ্যুত করা সহজ বিষয় নয়। কেউ অভিযুক্ত হলে প্রথমে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি যাচাই করে, তারপর তদন্ত কমিটির রিপোর্টে চাকরিচ্যুত করার সুপারিশ হলে সেটা আরও একটি কমিটি দিয়ে যাচাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয়। যেহেতু আমাদের তদন্ত কমিটি রিপোর্টে সেই সুপারিশ হয়নি, এখন আর কোনো কমিটির প্রয়োজন হচ্ছে না। তিনি পুনরায় চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন।”
তবে সোমবারের সিন্ডিকেট সভায় অংশগ্রহণকারী একজন সদস্য বলেন, “এই কমিটি সভায় পূর্বের কমিটির প্রতিবেদনকে ‘যথার্থ’ বলেছে এবং সেই প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে বলে মত দিয়েছে। কিন্তু এই কমিটি অভিযুক্তের পজিশন ডেমোট করতে সুপারিশ করেছে। যেহেতু অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।”
গতবছর ডাকসুর ওই নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে ভোট শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগেই ফল বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল অধিকাংশ প্যানেল। ফল বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনও করে তারা।
এর মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী এই দাবিতে অনশন করেন। অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে তারা অনশন ভেঙেছিলেন।